শেয়ারবাজারে সম্প্রতি লোকসানি দুই কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড (আইএসএন) এবং জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর শেয়ারদরের লাগামহীন উল্লম্ফন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়ায় কোম্পানি দুটির শেয়ারদরের দৌড় যেন হঠাৎ করেই থমকে গেল।
মাত্র এক মাসের মধ্যে আইএসএন-এর শেয়ারের দাম ১৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায় উঠেছে। অন্যদিকে, দুই মাসের মধ্যে জিকিউ বলপেন-এর শেয়ারের দাম ১৩৪ শতাংশ বেড়ে ১৭০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৪০০ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অথচ, এই দুটি কোম্পানিই দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে জর্জরিত।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মাত্র ১১ কোটি টাকা মূলধনের আইএসএন-এর রিজার্ভ ঘাটতি প্রায় ৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের ৯ কোটির বেশি লোকসান হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়েও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে তাদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, জিকিউ বলপেন গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক লোকসানে আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই কোম্পানিটি প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান দেখিয়েছে, যেখানে তাদের মূলধন মাত্র ৯ কোটি টাকা।
এমন দুর্বল আর্থিক পারফরম্যান্সের পরেও শেয়ারের দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাজার বিশ্লেষকরা গুজব কিংবা ভেতরের তথ্য ফাঁসের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তাদের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ এই কোম্পানি দুটির বেশিরভাগ শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। জিকিউ বলপেনের ৫৫ শতাংশ এবং আইএসএনের প্রায় ৬৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে। ডিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তা বিএসইসিকে জানানো হবে। বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কোম্পানি দুটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি ক্ষতি দেখতে এরই মধ্যে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএসই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কমিশনে রিপোর্ট জমা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তদন্তের খবরেই কোম্পানি দুটির শেয়ারদর কমতে শুরু করেছে। রোববারও আইএসএন-এর শেয়ার দিনের প্রথম ভাগে সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হলেও পরে তা কমে আসে এবং দিনের শেষে আগের দিনের চেয়ে ১ টাকা ১০ পয়সা কমে ১০৪ টাকা ৬০ পয়সায় ক্লোজিং হয়।
একই ঘটনা ঘটেছে জিকিউ বলপেন-এর ক্ষেত্রেও; এটি বাড়তি দামে লেনদেন শুরু করলেও তদন্তের খবরে পিছু হটে যায় এবং দিনশেষে ২ টাকা ৫০ পয়সা কমে ৩৯৮ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন শেষ করে।