ব্রোকারদের ছাড়া পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয় মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পর্ষদ বাজার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে। ডিএসইর ওপর আপনাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। ডিএসইর মাধ্যমে পুঁজিবাজার পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গত তিনদিন ধরে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করছি। যার মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারের উন্নয়ন। বাজারের বাস্তবতা সম্পর্কে যারা ব্রোকার, তারাই সবচেয়ে বেশি জানেন। ব্রোকারদের বাদ দিয়ে এই বাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বুধবার (১৫ মে) ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাথে ডিএসইর করা এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ডিএসইর পরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন, রুবাবা দৌলা, মোহাম্মদ শাহজাহান, শরিফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড ডি রোজারিও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, ডিএসই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ডিবিএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর হায়দারসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
বৈঠকে ডিএসই’র চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমাদের বাজারে জেড ক্যাটাগরিতে ১০০ এর বেশি কোম্পানি আছে। এর আগে একবার জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য বাজারে ধীরগতি দেখা যায়। আজকে যে অবস্থা তা কিন্তু একদিনে এখানে আসেনি। তাই আপনারা বললেই তৎক্ষণাৎ সব ঠিক করে ফেলতে পারব না। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ড বাজার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে যেসব নীতি হচ্ছে সেখানে ছোট ছোট অপরাধীদেরকে ধরতে গিয়ে বড়দের জন্য সমস্যা হচ্ছে। তাই নীতি তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের উপর আপনাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। ডিএসইর বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে এতে বাজার এগিয়ে যাবে।
আইপিও প্রসঙ্গে ড. হাসান বলেন, আইপিওতে যেসমস্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো আমাদেরকে পয়েন্ট আকারে লিখিতভাবে জানান। আমরা বিএসইসির সঙ্গে সে বিষয়ে বৈঠক করে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করব। তাই আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে বাজারের ইতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে হবে।
ড. হাসান বাবু আরও বলেন, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সেই উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসেছি। উনারা বিভিন্ন বিষয় আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছে। মার্কেট যেন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এসময় ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, আমি ডিএসইতে কাজ করার সুবাদে এখানকার বিভিন্ন সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনেছি। আমি আবার কমিশনে ফিরে যাচ্ছি কমিশনার হিসেবে। কমিশনে কাজ করার মাধ্যমে এগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো। আপনারা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সে বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আমরা বিগত ২৫ বছর ধরে এ কাজটি করার চেষ্টা করছি। আমরা গত ৫ মে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে একটি চিঠি দিয়ে সরকারি কোম্পানিগুলোর সাথে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে চেয়েছি, যাতে তারা সহজে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। এর কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী এই যুগান্তকারী নির্দেশনাটি দিয়েছেন। আশা করছি আগামি জুন মাসের মধ্যে আমরা সচেতনতামূলক কর্মসুচিটি করতে পারবো। আর এই বিষয়ে আপনাদেরকে আমরা সহযোগী হিসেবে চাই।
তার আগে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ডিএসই ট্রেকহোল্ডারগণ আগে বাজার উন্নয়নে ডিএসই’র বোর্ড সদস্যদের সাথে কাজ করতো। তাই বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও ডিএসইকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ট্রেকহোল্ডারদেরকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে। বিগত দিনে বাজারের কোনো সমস্যা বা আইপিওর বিষয়ে আমরা যে পরামর্শ দিতাম সেটা গ্রহণ করা হত। কিন্তু এখন সেটা আর করা হয় না। বিগত কয়েক বছরে যেসব সিকিউরিটিজ বাজারে এসেছে সেসব শেয়াররের অধিকাংশের অবস্থা ভালো না। আইপিও হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রাণ। সেখানেই যদি সমস্যা হয় তাহলে বাজার এগোবে না। আজকে কোথাও রোড শোতে গেলে ১৫ বছর ধরে সবচেয়ে ভালো কোম্পানি হিসেবে একটির কথা বলা লাগে। তাই ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের সেটা তাদেরকেই আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে যে এসএমই মার্কেট আছে। সেটা আসলে কতটা কাজ হচ্ছে এবং সেখানের কোম্পানিগুলো কতটা ভালো সেটা যাচাই করতে হবে। আমাদের বাজারে ইক্যুইটি ছাড়া অন্যকোন ভালো প্রোডাক্ট নাই। যা গত ১৫ বছর ধরেই একইভাবে চলছে। এই বাজারে ট্যালেন্ট থাকে না। কারণ এখান থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। আজকে যদি নতুন কাউকে এখানে ভালো কিছু করার কথা বলা হয় তাহলে কাউকে পাওয়া যাবে না। আমরা যারা ২০-২৫ বছর ধরে কাজ করে আসছি তারাই আছি । বাজার উন্নয়নে এখানে যা যা করার সে ব্যাপারে আপনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) নেতারা আরও বলেন, বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে না দিলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তালিকাভুক্তি আইনে সংশোধন প্রসঙ্গে ডিবিএ নেতারা বলেছেন, লিস্টিং রেগুলেশনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ভালো ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্তকরণে নজর দিতে হবে। ভালো কোম্পানি আসলে বাজারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। বাজারে যেন বাজে আইপিও না আসে। সেক্ষেত্রে আইপিওগুলো দেওয়ার আগে সুনিশ্চিত ভাবে কোম্পানিগুলোর তথ্য জানতে হবে। পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেট মেকারদের প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো দিতে হবে।