1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আবারও বিএসইসি চেয়ারম্যান, যেমন ছিল তাঁর আগের ৪ বছর

  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

২০২০ সালের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এম খায়রুল হোসেন। ওই মাসেই উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ পান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি নিয়ে নেতৃত্বে আসেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

খায়রুল হোসেন একটানা ৯ বছর দায়িত্ব পালন শেষে যখন বিদায় নেন, করোনার কারণে তখন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারের লেনদেন। তত দিনে টানা দরপতনে তলানিতে নেমে এসেছিল শেয়ারবাজারের সূচক। চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের প্রতি ছিল না সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের শেয়ারের ব্যাপক জালিয়াতি। একের পর এক দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিকে বাজারে আসার সুযোগ করে দেওয়ায় আইপিও বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে—এমন অভিযোগ ছিল সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে।

খায়রুল হোসেনের সময়ে শেয়ারবাজারে আসা বেশির ভাগ কোম্পানি তালিকাভুক্তির কয়েক বছর যেতে না যেতেই লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়। কিছু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। শুরুতে তাই শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম যে উদ্যোগই নিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা তাতে সমর্থন দিয়েছেন।

শুরুর চমক পরে মাথাব্যথার কারণ

২০২০ সালের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দায়িত্ব নেওয়ার ১৩ দিনের মাথায় ২০২০ সালের ৩১ মে শেয়ারবাজারের বন্ধ লেনদেন চালু করেন। এরপর শুরুর কয়েক মাস শিবলীর নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত কমিশন কারসাজির বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নানা ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে। মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয় কারসাজির সঙ্গে যুক্ত বিনিয়োগকারী, কোম্পানির উদ্যোক্তা, ব্রোকারেজ হাউসের মালিক ও নির্বাহীদের বিরুদ্ধেও। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করে। শিবলী কমিশনের প্রথম দেড় বছরের নানা উদ্যোগের ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ৭ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টের রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যায়। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারের লেনদেনও তিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়।

কারসাজি বন্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। ন্যূনতম শেয়ারধারণের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সরিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। একের পর এক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন করা হয় রোড শো। যদিও অভিযোগ ছিল, শেয়ারবাজারের চেয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির গুরুদায়িত্ব নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তত দিনে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা লাগে শেয়ারবাজারেও। ফলে শুরুর সাফল্য শেষ দুই বছরে ম্লান হয়ে যায়। যেসব উদ্যোগ নিয়ে তিনি মেয়াদের শুরুতে সফলতা পেয়েছিলেন, সেসব উদ্যোগের বেশির ভাগ পরবর্তী সময়ে শেয়ারবাজারে কারসাজির বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আর সেসব কারসাজির কারণেই বাজার এখন ধুঁকছে।

পতন ঠেকাতে ফিরে আসে ফ্লোর প্রাইস

শেয়ারবাজারে প্রথম ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ার অভিনব এক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল খায়রুল হোসেনের আমলে, ২০২০ সালের মার্চে। ঢাকার বাজারের সূচক সাড়ে ৩ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এলে পতন ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নিয়েছিল তৎকালীন কমিশন। ২০২১ সালের শুরুতে বাজারে গতি ফিরে এলে সেই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাজারে আবারও পতন শুরু হয়। সেই পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের জুলাইয়ে শেয়ারবাজারে আবারও ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে শিবলী কমিশন। সেই ফ্লোর প্রাইস অব্যাহত ছিল দেড় বছরের বেশি সময়। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হয় ফ্লোর প্রাইস।

এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আবার শুরু হয় দরপতন। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচকটি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বা ৯২৯ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টের ঘরে। এ পতনের প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নেমে আসেন একদল বিনিয়োগকারী। তাঁরা বাজারের কারসাজি বন্ধ ও পতন রোধে ব্যর্থতার জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।

এ রকম এক সময়েই শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে পুনর্নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই পুনর্নিয়োগের আদেশ জারি করেছে।

বন্ধ কোম্পানি চালুর উদ্যোগ ঘিরেই বড় কারসাজি

২০২০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারের প্রায় অর্ধশত লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানির পর্ষদ বদলে কোম্পানিগুলোকে লাভজনকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে নতুন করে স্বতন্ত্র পর্ষদ নিয়োগ করা হয়। আর কিছু কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বই বদলে দেওয়া হয়। আবার কিছু কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব প্রক্রিয়াকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে শুরু হয় বড় ধরনের কারসাজি। মালিকানা বদল বা পর্ষদ বদলের খবরকে ঘিরে হু হু করে বাজারে দাম বাড়তে থাকে কিছু শেয়ারের।

এসব কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এমারেল্ড অয়েল, ফু-ওয়াং ফুড, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ (সাবেক ইমাম বাটন), লিবরা ইনফিউশন, লিগেসি ফুটওয়্যার, পেপার প্রসেসিং, সোনালী পেপার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরও বেশি কিছু কোম্পানি। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এক–দুই বছরে কয়েক গুণ বেশি বেড়েছে। আগে বাজার থেকে একটি গোষ্ঠী কম দামে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার কিনে নেয়। পরে বিনিয়োগের নামে বিএসইসির সহযোগিতায় এসব কোম্পানির পর্ষদে জায়গা করে নেয় তারা। এরপর কোম্পানিকে লাভজনক করা ও নতুন নতুন বিনিয়োগের খবর দিয়ে বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। কয়েক গুণ মূল্যবৃদ্ধির পর বেনামে কেনা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ওই গোষ্ঠী বিপুল মুনাফা তুলে নেয়। কিন্তু কমসংখ্যক বন্ধ কোম্পানিরই অবস্থার বদল হয়েছে এ উদ্যোগে। ফলে দেখা যাচ্ছে, বন্ধ কোম্পানি চালুর এ উদ্যোগ মূলত শেয়ারবাজারে কারসাজির বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

এমনকি এ সুযোগ কাজে লাগাতে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি মাত্র কয়েক কোটি টাকায় কিনে নিয়ে নতুন শেয়ার ইস্যু ও পুনরায় সেসব কোম্পানিকে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের মাধ্যমেও কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে একটি চক্র।

সক্রিয় কারসাজিকারকেরা, প্রশ্নবিদ্ধ বিএসইসি

গত চার বছরে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কারসাজিকারক হিসেবে সামনে চলে আসে একটি নাম, আবুল খায়ের হিরু অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এ ছাড়া কারসাজির বিভিন্ন শেয়ারের সুবিধাভোগী ছিলেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ, যিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপারেরও চেয়ারম্যান। আরও যুক্ত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল ও পরিচালক আদনান ইমামসহ আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে শেয়ারের দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটাতেন আবুল খায়ের হিরু, যিনি সমবায় অধিদপ্তরের একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের প্রাক্তন ছাত্র। আর্থিক লাভের জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানির উদ্যোক্তারাও।

চক্রটি এনআরবিসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফিন্যান্স, ফরচুন শু, জেনেক্স ইনফোসিস, সোনালী পেপার, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সসহ বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কারসাজির মাধ্যমে। বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের সুবাদে চক্রটি বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। একসময় বাজারে এমন প্রচারও হয়েছে যে এই চক্র যে শেয়ারে হাত দেয়, সেই শেয়ারেরই দাম বাড়ে লাফিয়ে। এ কারণে ২০২০-২০২১ সালে অনেক উদ্যোক্তা, শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরাও শেয়ারের দাম বাড়াতে এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন।

শুরুতে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিবলী কমিশন বাহবা পেলেও মেয়াদের মাঝামাঝি এসে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে যায় কমিশন। এমনকি অনেক তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখও দেখেনি। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিই আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

বড় চ্যালেঞ্জ আস্থা ফেরানো

শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য আস্থার সংকটকেই বড় কারণ মনে করা হচ্ছে। কারসাজির ভয়, সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার অংশীজনদের মধ্যেও এ সংকট তৈরি হয়েছে। বাজার অংশীজনদের বড় অংশও এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে পতন ঠেকাতে শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা কমিশনকে জানিয়েছে ডিএসইর পর্ষদ। আর ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে পড়েছেন। ফলে পুনর্নিয়োগ পাওয়া শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো।

বাজার পরিস্থিতি

গতকাল সূচকের বড় উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৯৭ পয়েন্ট বা পৌনে ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬১৬ পয়েন্টে। লেনদেনও ছাড়িয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিবলী রুবাইয়াতের পুনর্নিয়োগে খুশি হয়েছে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী। তাই পুনর্নিয়োগে তারা বাজারে সক্রিয় হয়েছে। আবার পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুরোধে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। তাতে গতকাল বাজারে বড় উত্থান হয়েছে। তবে এ উত্থান টেকসই হয় কি না—এ নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে বিনিয়োগকারীদের মনে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ