এক সময়ে ভালো মুনাফায় ছিল রাষ্টায়াত্ব স্বল্প মূলধনী কোম্পানি ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেড। কেবল উৎপাদন ও বিপননে ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে কোম্পানিটি হঠাৎ লোকসানের কবলে পড়ে। ওইবছর কোম্পানিটির লোকসান হয় শেয়ারপ্রতি ১৫ পয়সা।
তার পরের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির বড় লোকসানে পড়ে। সে বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪ টাকা ৭২ পয়সা। পরের বছর ২০২০ সালে লোকসান আরও বেড়ে যায়। ওইবছর লোকসান দাঁড়ায় ৬ টাকা ৪৬ পয়সায়।
তবে পরের বছর ২০২১ সাল থেকে কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এবছর শেয়ারপ্রতি লোকসান কমে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৬৮ পয়সায়। তার পরের বছর ২০২২ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকেও লোকসানের অপবাদ নিয়ে চলতে থাকে কোম্পানিটি। তবে শেষ প্রান্তিকে বড় মুনাফার মুখ দেখে। ফলে ওইবছর শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৩৪ পয়সা।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকেই কোম্পানিটির মুনাফায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২২) শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ০৮ পয়সা। যা আগের বছর প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ০১ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির ইপিএস হয় ১৭ পয়সা (সংশোধিত)। যা আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ১ টাকা ৮১ পয়সা। দুই প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) মিলে ইপিএস দাঁড়ায় ২৫ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিকে ডলারের উচ্চ দামের কারণে প্রকৌশল খাতের অন্যান্য কোম্পানির মতো এটিরও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। তারপরও তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২৩) কোম্পানিটি মুনাফার ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস হয় ১৯ পয়সা। যা আগের বছর তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসান ছিল ৩১ পয়সা। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২২-মার্চ’২৩) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪৪ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা। অর্থাৎ নানা সঙ্কটের মধ্যেও কোম্পানিটি আগের বছরের বড় লোকসানের বিপরীতে এবছর মুনাফার ঊর্ধ্বগতি বজায় রেখেছে। শেষ প্রান্তিকে আগের বছরগুলোর মুনাফার মতো মুনাফা হলে এবছর কোম্পানিটির বড় মুনাফার মুখ দেখতে পারে।
ডিভিডেন্ড
২০১৮ সালে কোম্পানিটি লোকসানে পড়লেও শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। পরের বছর ২০১৯ সালে লোকসান বেড়ে যাওয়ায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৫ শতাংশে নেমে আসে।
কিন্তু পুঞ্জীভূত লোকসান আরও বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। গত বছর ২০২২ সালে কোম্পানিটি মুনাফায় ফেরায় ওইবছর শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়।
চলতি অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফায় ধাররাবাহিক প্রবৃদ্ধি রযেছে। শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিটি বরাবরই বেশি মুনাফা করে থাকে। এবছরও যদি আগের বছরের ধারাবাহিকতায় শেষ প্রান্তিকে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি থাকে, তাহলে এবছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের অনেক ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে-এমনটাই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।
রিজার্ভ
ইস্টার্ন কেবলস একটি স্বল্প মূলধনী কোম্পানি। প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৮৮১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ৩৩.৪০ গুণ বেশি। পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে রিজার্ভ বিবেচনায় এটি রাষ্ট্রায়াত্ব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রিজার্ভের কোম্পানি এবং প্রকৌশল খাতেরও শীর্ষ রিজার্ভের কোম্পানি। সর্বোপরি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৪১০টি কোম্পানির মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভের কোম্পানি।
শেয়ারের মালিকানা
কোম্পানিটির মোট শেয়ার রয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ। এরমধ্যে সরকারের কাছে রয়েছে ৫১ শতাংশ, উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১১.০৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭.০৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩০.৮৮ শতাংশ শেয়ার।
সম্পদ মূল্য
সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য হয়েছে ৩৪৪ টাকা ৪৯ পয়সা। সর্বশেষ এর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩৪ টাকায়। যা সম্পদ মূল্যের অনেক নিচে।