1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

বাজারের স্থিতি এবং গতিও ফিরবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরলে

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০
rakibur-rahman

মো: রকিবুর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান পরিচালক বলেন, একাধিক মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং একজন ট্রেকহোল্ডার হিসেবে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব, বিদ্যমান দূর্বলতা বা সমস্যা এবং করণীয় সম্পর্কে আমার বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ আছে। পর্যবেক্ষণগুলো হচ্ছে-

দেশের পুঁজিবাজার অনেক দিন ধরে প্রাণহীন,স্থবির।বাজারে লেনদেন অস্বাভাবিকরকম কমে গেছে। নতুন বিনিয়োগকারী তেমন আসছে না। উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের অনেকে ঝরে পড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়ানোর জন্য যেখানে এই বাজারের পরিধি বড় করা দরকার,সেখানে যেন বাজার অনেকটা ছোট হয়ে আসছে।

বাজারের বিশাল বিনিয়োগকারী গোষ্ঠিসহ স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে পুঁজিবাজারকে গতিশীলতা ফেরানো, বাজারকে স্থিতিশীল করা খুবই জরুরি।

ক.দেশে শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত করা ও অবকাঠামো উন্নয়নকে কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয়  দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। এর পরিবর্তে পুঁজিবাজারকে পরিণত করতে হবে এই অর্থায়নের প্রধান উৎসে। কারণ ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদী আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন করছে বলে সব সময় তাদেরকে তারল্যের চাপে থাকতে হয়। কখনো কখনো এই চাপ সংকটে পরিণত হয়। একমাত্র পরিণত পুঁজিবাজারই ব্যাংকগুলোকে এই চাপ ও খেলাপি ঋণের সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারে।আর এ জন্যে বাজারকে করতে হবে স্থিতিশীল ও গতিময়।বাড়াতে হবে এর ব্যাপ্তি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে এখনো এই ধরনের বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ে না।বরং কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে-এই ধরনের উদ্যোগ যাদের নেওয়ার কথা সেই অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটাই নির্লিপ্ত। আমাদের মুদ্রানীতি মূলত অর্থবাজারকেন্দ্রীক, এতে পুঁজিবাজার সব সময়ই থাকে উপেক্ষিত।

খ. পুঁজিবাজার হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।তাই বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলা খুবই জরুরি ছিল।কিন্তু বাস্তবসম্মত উদ্যোগের অভাবে এখানো সেটি হয়ে উঠেনি।

গ. বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে কিছু আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে থাকে।

ঘ. একটি গতিশীল বাজারের অন্যতম পূর্বশর্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের সুরক্ষা।আর এর জন্য দরকার শক্তিশালী মনিটরিং ও সুপারভিশন; কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। পুঁজিবাজারে কেউ-ই যেন আইনের উর্ধে না থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করা।

ঙ. গত কয়েক বছরে আইন-কানুন ও বিধিমালার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি।

চ. প্রায় সব আইন ও বিধিমালা স্বার্থান্বেষীদের সুবিধার জন্য, বিশেষ করে দুষ্ট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে, সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে নয়।

ছ. এ সময়ে বাজারে লেনদেনের পরিমাণের প্রতি কেউ নজর দেয়নি। তাদের সব মনোযোগ ছিল সূচকের নড়াচড়া নিয়ে। সূচক পরিবর্তন শেয়ারের সামগ্রিক মূল্য পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি হলেও তারা শেয়ারের মূল্য কেন কমে যাচ্ছে, তার আসল  কারণের দিকে নজর দেয়নি।

জ. বিএসইসি একের পর এক আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করে গেছে। কিন্তু কোনো আইন সেভাবে বাস্তবায়ন করেনি। এসব আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই ছিল অনেকটা নির্বিকার।

ঝ. করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই পুঁজিবাজার টানা অনেকদিন বন্ধ ছিল। এতে বিশ্বে আমাদের বাজার ও এক্সচেঞ্জের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।

ঞ. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজার মূলধনের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশ থেকে ১৭০ শতাংশ পর্যন্ত।অথচ আমাদের দেশে তা ১২ শতাংশের মতো মাত্র। গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলেও পুঁজিবাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি।

ট. বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আকারে খুবই ছোট। এখানে বিনিয়োগ উপযোগী ভাল মৌলভিত্তি ও প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। এই বাজার পুরোটাই ইক্যুইটিভিত্তিক।গত কয়েক বছরে বাজারে পণ্য বৈচিত্র্য আনার ব্যাপারে কোনোই উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।

শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়তে করণীয়ঃ

আমি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ  করবো আমার নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো বিবেচনা এবং বাস্তবায়ন করার জন্য, এরফলে বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা ফিরে আসবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে গতির সঞ্চার হয়েছে,তা ধরে রাখতে হলে আমাদের পুঁজিবাজারকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।বাড়াতে হবে এর ব্যাপ্তি ও গভীরতা। করোনাভাইরাসের প্রকোপে অর্থনীতি যে ঝাঁকুনি খেয়েছে,তা সামলে উঠার জন্যেও পুঁজিবাজারের বিকাশ জরুরি।জরুরী হচ্ছে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও গতি সঞ্চার করা। এ লক্ষ্যে নিচের বিষয়গুলো ভাবা যেতে পারে-

০১. আমাদেরকে অবশ্যই বিনিয়োগকারী,সাধারণ শেয়ারহোল্ডারসহ স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।কোনোভাবেই কায়েমী স্বার্থবাদীদের জন্য অনুকূল আইন প্রণয়ন পরিহার করতে হবে।

০২. অবিলম্বে কোম্পানি কর্তৃক বাজার থেকে নিজের শেয়ার কিনে নেওয়ার (Buy-back)জন্য আইন পাশ করতে হবে। প্রয়োজনে এসআরও  জারির মাধ্যমে বিষয়টি চালু করে দিতে হবে,পরে জাতীয় সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে। কোম্পানি আইন সংশোধন করে বাই-ব্যাকের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

বিশ্ব জুড়ে বাই-ব্যাক একটি সাধারণ চর্চা। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে অপ্রত্যাশিত জায়গায় চলে গেলে ভাল মৌলভিত্তি ও প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন কোম্পানি বাজার থেকে কিনে নেয়। তাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পায়। বাজারে বিক্রির চাপ কমে এবং শেয়ারের দরপতন থেমে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাম বাউন্সব্যাক করে।

০৩. বাজারে তারল্য সংকট কাটাতে মার্কেট মেকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এই ব্যবস্থা বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব সময় সহায়তা করবে। কোনো শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে গেলে মার্কেট মেকার তা কিনে নেবে,তাতে পতন রোধ হবে। আবার দাম বেড়ে সীমা-ছাড়া হলে মার্কেট মেকার তার শেয়ার বিক্রি করে দেবে। সরবরাহ বাড়ায় দাম অস্বাভাবিক না বেড়ে যৌক্তিক পর্যায়ের কাছাকাছি নেমে আসবে।

০৪. বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে।

০৫. যদি কোনো কোম্পানির পরিচালক, উদ্যোক্তা বা কর্মকর্তারা কোনো ধরণের মূল্য কারসাজি বা সুবিধাভুগী লেনদেনে (Insider Trading) যুক্ত বলে সন্দেহ হয় তাহলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করতে হবে। তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

০৬. যদি কোনো কোম্পানি শেয়ারের দাম বাড়ানোর অভিপ্রায়ে অসত্য তথ্য বা বানোয়াট মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (PSI) প্রকাশ এবং কাছাকাছি সময়ে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের কেউ শেয়ার বিক্রি করে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখী করতে হবে।

০৭. তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে সুশাসন (corporate governance) নিশ্চিত করতে হবে।

০৮. তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসতে হবে।

০৯. তালিকাভুক্ত কোম্পানির কোনো পরিচালক ব্যাংক বা ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (NBFI)থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে,সহজ কথায় সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে তাদের পদ শূন্য করে দিতে হবে।

১০. তালিকাভুক্ত কোম্পানির আত্মীয় বা বন্ধুদের মধ্য থেকে ‘অনুগত’ ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যারা সাধারণ তথা সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। এ ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় বিবেচনায় রাখা ভালো হবে-

ক. স্বতন্ত্র পরিচালকদের দীর্ঘ পেশাগত ক্যারিয়ার থাকতে হবে।

খ. তাদের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে।

গ. তাদের নিজস্ব সামর্থ্য,সততা ও পেশাগত নিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার মত যোগ্য হতে হবে।

ঘ. স্বতন্ত্র পরিচালকরা কার্যক্ষেত্রে স্বাধীন এবং কোম্পানির পরিচালক ও কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্ত হবেন।

ঙ. স্বতন্ত্র পরিচালকরা তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে উচ্চ মানের সুশাসন ও উন্নত করপোরেট সংস্কৃতির চর্চা নিশ্চিত করবেন।

চ. অবশ্যই স্বতন্ত্র পরিচালকদেরকে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করতে হবে।

১১. কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের আইন পরিপালনে কঠোরভাবে বাধ্য করতে হবে।

১২. কোনো উদ্যোক্তা-পরিচালকের এককভাবে ন্যুনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে এবং সমষ্টিগতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারের কম থাকলে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোটা পূরণ করার নির্দেশ দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা তা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে পরিচঅলক পদ খারিজ করে দিতে হবে।

১৩. যদি ন্যুনতম শেয়ার না থাকার কারণে কোনো পরিচালকের পদ খালি হয়ে যায় তাহলে অন্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কারো ২ শতাংশ শেয়ার থাকলে তাকে ওই পদে নিয়োগ দিতে হবে।

১৪. পুঁজিবাজারের জন্য যেসব আইনকানুন প্রণয়ন করা হবে,সেগুলো সঠিকভাবে কার্যকর করতে হবে। অতীতে অনেক আইন হলেও সেগুলো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি বলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে।এই আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।

১৫. ভাল মৌলভিত্তি ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাসম্পন্ন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

১৬. বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে।

১৭. সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির (Direc Listing) এর মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসতে হবে।

১৮. বন্ড মার্কেট,এসএমই প্ল্যাটফরম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড শুরুর জন্যে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা অপসারণ করতে হবে।

১৯. বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা সরিয়ে নেওয়া যতটুকু সম্ভব আইনকানুন শিথিল করতে হবে। তাদেরকে বন্ড, সুকুক, ইটিএফ ইত্যাদির প্রস্তাব করতে হবে, বৈচিত্রময় পণ্যের কারণে যাতে তারা এখানে বিনিয়োগে উৎসাহ পায়।

২০. মৌলভিত্তির দিক থেকে দূর্বল ও পারফরম্যান্স খারাপ এমন কোম্পানিগুলোকে মূল বোর্ড থেকে সরিয়ে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে নিয়ে যেতে হবে।জে ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদেরকে বাজার থেকে তাদের কোম্পানির ন্যুনতম ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নিতে বাধ্য করতে হবে।যদি তারা তা কিনে নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অন্য কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে চাইলে সেটিকে প্রণোদনা দিতে।

২১. বিএসইসির নির্দেশনার আলোকে ডিএসই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দিয়ে ফ্লোরপ্রাইস নামের সার্কিটব্রেকার চালু করেছে।করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এটি অপরিহার্য ছিল।এই ব্যবস্থার কারণে শেয়ার-মূল্যের ফ্রিফল থেমেছে।কিন্তু এই ফ্লোরপ্রাইস ব্যবস্থা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। বিশ্বের পুঁজিবাজারে এই ধরনের কোনো চর্চা নেই। তাই এটি দীর্ঘদিন থাকলে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে,তারা এই বাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারাবে।তাই আমাদেরকে অবশ্যই এই ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।তবে ফ্লোরপ্রাইস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে,সুপরিকল্পিতভাবে এবং ধীরেসুস্থে যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত না হন।এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না।তবে পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে এগুতে হবে।

২২. এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের কিছু দূর্বল জায়গার ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি।

২৩. সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ ভ্যালুয়েশন যে সকল কোম্পানি করবে সে সকল কোম্পানির সচ্ছতা ও জবাব দিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই সকল কোম্পানিকে দক্ষ, সৎ এবং প্রফেশনাল ম্যানেজম্যান্ট দ্বারা পরিচালিত করতে হবে। তাতে করে বিনিয়োগকারীদের কাছে এ সকল কোম্পানিগুলোর গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

২৪. আমাদের দেশের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হলে যে সকল কোম্পানিগুলোকে বন্ড ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে তাদের Assets, Earnings, Growth, Expansion কে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। অপরদিকে যে সকল Asset Management Company  মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে তাদেরকে অবশ্যই প্রফেশনাল, দক্ষ ও সৎ হতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা থেকে শেয়ারহোল্ডার/ব্রোকার/ট্রেকহোল্ডারদের আলাদা করা।কিন্তু এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।আমরা দেখছি, সেই ২০১৩ সাল থেকেই শেয়ারহোল্ডার-পরিচালকরা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে।এখনো শেয়ারহোল্ডার-পরিচালকরাই ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উর্ধতন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন।এমনি তারা স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নকেও প্রভাবিত করে থাকেন,যা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের মূল দর্শনের পরিপন্থী।এটি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট।তারা এ বিষয়ে বিএসইসির দ্রুত পদক্ষেপ আশা করেন,যাতে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় এবং দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ উন্নত দেশের ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের মতো করে কাজ করতে পারে।

শেষ করার আগে আমি একটি বিশেষ বিষয় বিএসইসির বিবেচনার জন্য তুলে ধরতে চাই।বিএসইসির উচিত নয় সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রতি সব মনোযোগ নিবদ্ধ করা।সারা বিশ্বের মতো আমরাও জানি, সূচকের উঠা-নামা নির্ভর করে সামগ্রিক শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের উপর।শেয়ারের দাম বাড়লে সূচক বাড়ে, অন্যদিকে দাম কমলে সূচকও কমে।তাই বিশ্বের কোনো এক্সচেঞ্জই সূচকের উঠা-নামা নিয়ে মাথা ঘামায় না।তাদের ভাবনার বিষয় লেনদেনের পরিমাণ।যদি লেনদেন কমতে থাকে তাহলে সেটি ইঙ্গিত দেয় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে।তাই সূচকের উঠা-নামা নিয়ে না ভেবে,আমাদের ভাবা দরকার কেন ডিএসইতে লেনদেন কমে গেছে।

আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে দৃঢ় বিশ্বাস,আলোচিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হলে তা বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনবে। তাতে বাজারে স্থিতি এবং গতিও ফিরবে। এর ফলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ লাভবান হবে। আমাদের বাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত স্পনসর/ডিরেক্টর, পরিচালনা পরিষদের কর্তাব্যক্তি, ট্রেডার, ট্রেক হোল্ডার, শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে যদি কেউ মার্কেট ম্যানিপুলেশন, ইনসাইড ট্রেডিং বা সার্কুলার ট্রেডিং এর সাথে জড়িত থাকলে অথবা কোন রুলস, রেগুলেশন, আইন অমান্যকারীদের(প্রমান হলে) কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। হাই প্রোফাইল বা ক্ষুদ্রু বিনিয়োগকারী সে যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযত আইনের প্রয়োগ করতে হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ